বয়স ৫০ পেরোলেই অনেকেই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়ে
যান। দীর্ঘদিন করপোরেট চাকরি করার পর কী করবেন,
ভেবে পান না। এ সময় বসে বসে সময়ও কাটে না। নতুন করে
অফিসের বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাজে যোগ
দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই এ সময়
ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো কাজে যুক্ত হন। বিশেষজ্ঞরা
বলেন, নিজের জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া আর ক্যারিয়ার
পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে নিজেকে উজ্জীবিত রাখা
জরুরি।
ফ্রিল্যান্সার ইউনিয়ন ও অনলাইন ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম
আপওয়ার্ক প্রকাশিত ‘ফ্রিল্যান্সিং ইন আমেরিকা:
২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের
এক-তৃতীয়াংশ কর্মী বয়স ৫০ পার হলে পূর্ণকালীন বা
খণ্ডকালীন ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এ
বয়সের অধিকাংশ কর্মীরা স্বেচ্ছায় এ পেশা বেছে
নিয়েছেন।
পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের যাঁরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা
পেতে চান, তাঁদের জন্য চার পরামর্শ
বর্তমান দক্ষতাকে কাজে লাগান: সমীক্ষা অনুযায়ী, সব
বয়সী ফ্রিল্যান্সার তাঁদের দক্ষতা আর পারদর্শিতা
অনুযায়ী কাজগুলো করেন। এর মধ্যে রয়েছে পরামর্শ
দেওয়া, বিপণন, প্রোগ্রামিং প্রভৃতি। ফ্রিল্যান্সিং
মার্কেটপ্লেসে সাধারণত অদক্ষদের চেয়ে দক্ষরা কাজ
পান বেশি এবং তাঁদের আয়ও অনেক বেশি। যেসব দক্ষ
ফ্রিল্যান্স অনলাইনে কাজ করছেন, তাঁরা ঘণ্টাপ্রতি
গড়ে ২৮ ডলারের বেশি আয় করছেন। অদক্ষ কর্মীদের
ক্ষেত্রে গড় আয় ২০ ডলারের নিচে। যাঁদের বয়স ৫০
পেরিয়ে গেছে, তাঁরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে তাঁদের কাজের
অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে আয় করতে পারবেন। যাঁরা দক্ষ
ফ্রিল্যান্সার, তাঁরা আপওয়ার্কে সবচেয়ে বেশি আয়
করেন। যেমন অ্যাকাউন্টিং বা ফিন্যান্সের মতো
বিষয়গুলোতে আয় বেশি। যাঁরা করপোরেট পুনর্বিন্যাস,
বিটকয়েন ও আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং বোঝেন,
তাঁদের আয় ঘণ্টায় ২০০ ডলারের বেশি।
নেটওয়ার্কিং: ফ্রিল্যান্সিংয়ের দুনিয়ায় সবচেয়ে
বেশি কাজে লাগে নেটওয়ার্কিং। আপনাকে যত মানুষ
জানবে এবং আপনার দক্ষতার সম্পর্কে তাঁদের ধারণা
থাকবে, ততই কাজ পেতে সুবিধা হবে। ফ্রিল্যান্সিং ইন
আমেরিকা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিগত
যোগাযোগের বিষয়টি ফ্রিল্যান্সিং অ্যাসাইনমেন্ট
পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস। ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের
মধ্যে রয়েছে আগের ফ্রিল্যান্স গ্রাহক, বন্ধু ও পরিবার,
পেশাদার যোগাযোগ, পরিচিত প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি। এ
ক্ষেত্রে পঞ্চাশোর্ধ্ব তরুণদের তুলনায় সুবিধা পেতে
পারেন। কারণ তাঁদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও যোগাযোগ
কাজে লাগে। আপওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
স্টিফেন ক্যাসরিয়েল বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের
সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে যে বড়
নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, তা পরে আয়ের উৎস হতে পারে। এ
ক্ষেত্রে লিংকডইন দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া
ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার,
পিপলপার আওয়ার, ফ্রিল্যান্সার ডটকমের মতো সাইটে
অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ খোঁজা যেতে পারে।
প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ: বয়স হয়ে গেলেও যাঁদের দক্ষতা
রয়েছে, তাঁরা আরও দক্ষতা বাড়াতে বিনিয়োগ করতে
পারেন। শিখে ফেলতে পারেন এখনকার যুগোপযোগী
ডিজিটাল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া
ব্যবস্থাপনার নানা কৌশল। বয়সকে বাধা না মেনে
গ্রাহককে বোঝাতে হবে প্রতিযোগিতামূলক কাজে
এগিয়ে আছেন আপনি। যদি নিজের দক্ষতা বাড়াতে না
পারেন, তবে বেশি আয় করা ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন
সত্যি হবে না। ফ্রিল্যান্সিং ইন আমেরিকা প্রতিবেদনে
বলা হয়, ৭৩ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার দক্ষতা উন্নয়ন
প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে মত দিয়েছেন। এ
ছাড়া ৭১ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার বাজারে টিকে থাকতে
তাঁদের দক্ষতা বাড়িয়েছেন। এমনকি গত ৬ মাসে ৬৫
শতাংশ ফ্রিল্যান্সার দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ
নিয়েছেন। সফট স্কিলকেও অগ্রাহ্য করা যাবে না। কারও
সঙ্গে যোগাযোগ, টিমওয়ার্ক বা দর-কষাকষির মতো
বিষয়গুলো শিখতে হবে।
ধীরে চলুন: ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়ায় ঢুকেই কাঁড়ি কাঁড়ি
অর্থ আয় করে ফেলবেন, এমন ধারণা ভুল। আপওয়ার্কের
প্রধান নির্বাহী ক্যাসরিয়েলের পরামর্শ হচ্ছে, ধীরে ও
ধাপে ধাপে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে আসুন। আপনাকে
অনেক কিছু শিখতে হবে। কাজ খোঁজা ছাড়াও কীভাবে
কাজের জন্য টাকা নেবেন, তা শিখতে হবে। দামদর ঠিক
করা জানতে হবে। সব সময় হাতে কাজ থাকবে না। তাই
অন্য সময় কীভাবে চলবেন, সে বিষয়গুলো ভেবে এগোতে
হবে। শুরুতে এক বা দুইটি প্রকল্পে ফ্রিল্যান্সিং শুরু
করতে পারেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 Response to "৫০ পেরিয়েও প্রচুর আয় করবেন যেভাবে"
Post a Comment
Any Problem Comment Please